মাদার তেরেসার মানবিকতার গল্প: নোবেল জয়ী এই সাধ্বীর দাতব্য কাজের ১০টি অজানা দিক

webmaster

테레사 수녀 Mother Teresa    인도주의 활동 노벨 평화상 자선 단체 - Early Compassion in Kolkata**
A realistic, warmly lit image portraying Mother Teresa in her younger ...

বন্ধুরা, আজকাল চারপাশে কত কিছু ঘটছে, তাই না? ইন্টারনেট খুললেই নিত্যনতুন খবর আর তথ্যের মেলা। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে আমরা যখন প্রযুক্তির হাত ধরে এগিয়ে চলেছি, তখন মানবিকতার মূল্য যেন আরও বেশি করে অনুভব করি। আমরা সকলেই চাই আমাদের চারপাশটা সুন্দর হোক, অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে পারি। সম্প্রতি, GPT-এর মতো শক্তিশালী AI টুল ব্যবহার করে যখন আমরা বিশ্বের নানা প্রান্তে ঘটে চলা ঘটনা আর মানুষের প্রয়োজন নিয়ে গবেষণা করি, তখন অবাক হয়ে দেখি, কিছু কিছু বিষয় সময়ের সাথে সাথে আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। এই যেমন ধরুন, মানুষের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা আর সেবার দৃষ্টান্ত। এই আলোচনাগুলো শুধু তথ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে, নিজেদের জীবনে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সেটাই আমার এই ব্লগে আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করি। এমন সময় আমি যখন সত্যিকারের মানবিকতার কথা ভাবি, তখনই এক নাম বারবার আমার মনে আসে – মাদার তেরেসা।আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, তাঁর জীবনটাই ছিল যেন মানবসেবার এক জীবন্ত উদাহরণ। কলকাতার বস্তি থেকে শুরু করে বিশ্বের নানান প্রান্তে তিনি অসহায়, অসুস্থ আর পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য যা করে গেছেন, তা সত্যিই অতুলনীয়। নোবেল শান্তি পুরস্কার থেকে শুরু করে তাঁর প্রতিষ্ঠিত দাতব্য সংস্থা মিশনারিজ অফ চ্যারিটি, সবই তাঁর অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর ভালোবাসার প্রতীক। তাঁর কাজ আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, সামান্য ভালোবাসা আর একটু সহানুভূতি দিয়েও কত বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব। আমি যখন এসব নিয়ে ভাবি, তখন নিজেকেও যেন তাঁর মতো করে আরও কিছু করার অনুপ্রেরণা পাই। চলুন, তাঁর এই অসাধারণ জীবন আর আমাদের জন্য রেখে যাওয়া অমূল্য শিক্ষা সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জেনে নেওয়া যাক।

বন্ধুরা, মাদার তেরেসার কথা ভাবলেই কেমন যেন মনটা এক অন্যরকম শান্তি আর ভালোবাসায় ভরে ওঠে, তাই না? আমার মনে হয়, এই অস্থির পৃথিবীতে আমাদের সবারই এমন একজন ‘মা’-এর প্রয়োজন, যিনি নিঃস্বার্থভাবে শুধুমাত্র ভালোবাসা বিলিয়ে গেছেন। আমি যখন তাঁর জীবন নিয়ে পড়াশোনা করি বা তাঁর সম্পর্কে কিছু শুনি, তখন বারবার মনে হয়, মানুষ হয়ে জন্ম নিয়ে যদি এতটুকুও করতে না পারি, তবে জীবনটা হয়তো অসম্পূর্ণই থেকে যাবে। তাঁর কাজগুলো এতটাই অসাধারণ ছিল যে, তা শুধু সেবার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তা ছিল মানবতাকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করার এক প্রয়াস। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, যখন কোনো অসহায় মানুষের মুখে এক চিলতে হাসি ফোটাতে পারি, তখন তার থেকে বড় আনন্দ আর কিছুতে নেই। মাদার তেরেসা তাঁর সারা জীবন ধরে এই আনন্দটাই খুঁজে ফিরেছেন আর আমাদের শিখিয়ে গেছেন কীভাবে সেই আনন্দ নিজের জীবনেও নিয়ে আসা যায়। কলকাতার অলিগলিতে তাঁর পদচারণা, অসুস্থদের শুশ্রূষা করা, আর যারা সমাজে একেবারেই পিছিয়ে পড়া, তাদের পাশে দাঁড়ানোর সেই গল্পগুলো আজও আমার মনে এক গভীর দাগ কেটে যায়। এই গল্পগুলো শুধু গল্প নয়, এগুলি আমাদের বেঁচে থাকার পাথেয়।

কলকাতার বুকে এক মায়ের জন্ম: সেবার এক নতুন দিগন্ত

테레사 수녀 Mother Teresa    인도주의 활동 노벨 평화상 자선 단체 - Early Compassion in Kolkata**
A realistic, warmly lit image portraying Mother Teresa in her younger ...

প্রথম দিকের দিনগুলি: অভাবীদের মাঝে নিজেকে খুঁজে পাওয়া

মাদার তেরেসার জীবনের শুরুটা কিন্তু আজকের মাদার তেরেসা হিসেবে ছিল না। অ্যাগনেস গঞ্জা বোজাজিউ হিসেবে তিনি যখন সুদূর আলবেনিয়া থেকে মিশনারি হিসেবে ভারতে এলেন, তখন হয়তো নিজেও জানতেন না কলকাতার গলিঘুঁজিতে তাঁর জন্য কত বড় এক অধ্যায় অপেক্ষা করছে। লোরেটো সিস্টারদের সঙ্গে তিনি সেন্ট মেরি’জ স্কুলে পড়াতেন, আর সেই সময়টা কেটে যাচ্ছিল আর পাঁচজন শিক্ষকের মতোই। কিন্তু কলকাতার দারিদ্র্য, বস্তি এলাকার অসহায় মানুষদের কষ্ট তাঁকে ভীষণভাবে নাড়া দিচ্ছিল। আমার তো মনে হয়, এটাই ছিল তাঁর জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। ক্লাসরুমের চার দেয়ালের বাইরে যে এক ভিন্ন জগত আছে, যেখানে মানুষের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ হয় না, সেই দৃশ্য তাঁকে ভেতরে ভেতরে এক অদ্ভুত অস্থিরতা দিচ্ছিল। এই অস্থিরতা থেকেই জন্ম নিয়েছিল এক অদম্য ইচ্ছা – নিজের আরামের জীবন ছেড়ে এই অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর। আমি যখন তাঁর এই সিদ্ধান্তগুলোর কথা পড়ি, তখন মনে হয়, সত্যিই তো, জীবনের প্রকৃত সুখ হয়তো নিজের জন্য বাঁচার মধ্যে নেই, বরং অন্যের মুখে হাসি ফোটানোর মধ্যেই আসল আনন্দ লুকিয়ে আছে।

কলকাতার বস্তিতে এক নতুন স্বপ্নের বীজ বপন

১৯৪৬ সালে দার্জিলিং যাওয়ার পথে ট্রেনেই তিনি এক ঐশ্বরিক আহ্বান অনুভব করেন, যাকে তিনি পরে ‘কল উইথইন আ কল’ বা ‘আহ্বানের ভেতরের আহ্বান’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। আমার মনে হয়, এই অনুভূতিটাই তাঁকে সম্পূর্ণ নতুন এক পথে নিয়ে গিয়েছিল। তিনি লোরেটো সন্ন্যাসীদের প্রথাগত পোশাক ছেড়ে সাদা শাড়ি পরলেন নীল পাড়ওয়ালা, যা আজ তাঁর পরিচয়ের অংশ। এই সময় থেকেই শুরু হলো বস্তিতে বস্তিতে ঘুরে কাজ করা। কলকাতার বস্তিগুলোর অবস্থা তখন ছিল ভয়াবহ। রোগ, ক্ষুধা, অপুষ্টি আর হতাশা ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। মাদার তেরেসা এই মানুষদের কাছেই পৌঁছালেন, তাদের নোংরা শরীর পরিষ্কার করলেন, ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ বাঁধলেন, শিশুদের মুখে খাবার তুলে দিলেন। প্রথমদিকে তো তিনি নিজেই সব কাজ করতেন, কোনো সাহায্যকারীও ছিল না। আমার মনে হয়, এই একাগ্রতা আর সাহসটাই তাঁকে পরবর্তীকালে এত বড় একটা আন্দোলনে রূপ দিতে সাহায্য করেছে। তিনি নিজের হাতেই যেন এক নতুন পৃথিবী গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, যেখানে কোনো মানুষ অসহায় থাকবে না। এই সময় থেকেই তাঁর নামের পাশে ‘মাদার’ শব্দটি জুড়ে যায়, যেন তিনি সত্যিই হয়ে উঠলেন হাজার হাজার বঞ্চিত মানুষের মা।

মিশনারিজ অফ চ্যারিটি: ভালোবাসার একটি প্রতিষ্ঠান

Advertisement

মিশনারিজ অফ চ্যারিটির জন্মকথা ও উদ্দেশ্য

মাদার তেরেসা যখন নিজের হাতে অসহায়দের সেবা করা শুরু করলেন, তখন বুঝলেন, এই বিশাল কাজটা একা করা সম্ভব নয়। তাঁর ভাবনাগুলোকে বাস্তবে রূপ দিতে এবং আরও সুসংগঠিতভাবে কাজ করার জন্য তিনি ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠা করলেন ‘মিশনারিজ অফ চ্যারিটি’ (Missionaries of Charity)। আমার মনে হয়, এটা ছিল তাঁর জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাজ। এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল “ক্ষুধার্ত, বস্ত্রহীন, গৃহহীন, পঙ্গু, অন্ধ, কুষ্ঠরোগী, সমাজের সবচেয়ে অবাঞ্ছিত মানুষ, যাদের কেউ ভালোবাসে না, যাদের কেউ যত্ন নেয় না, যাদের সবাই এড়িয়ে চলে” তাদের সেবা করা। শুরুতে এই প্রতিষ্ঠানের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বা সমর্থন ছিল না। কিন্তু তাঁর একাগ্রতা আর ভালোবাসার টানে ধীরে ধীরে অনেকেই তাঁর সঙ্গে যোগ দিলেন। আমার মনে আছে, একবার এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “আমরা বড় কাজ করি না, আমরা ছোট কাজ করি বিশাল ভালোবাসা দিয়ে।” এই বাক্যটি আজও আমার মনে গেঁথে আছে। এই প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি যেন ভালোবাসার এক অফুরন্ত ভান্ডার তৈরি করেছিলেন, যার ছোঁয়ায় অসংখ্য জীবন নতুনভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিল।

বিশ্বজুড়ে তার প্রভাব এবং কার্যক্রম

মিশনারিজ অফ চ্যারিটি শুধু কলকাতাতেই থেমে থাকেনি। মাদার তেরেসার অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এই প্রতিষ্ঠান খুব দ্রুত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। ভারত ছাড়িয়ে ভেনিজুয়েলা, রোম, তানজানিয়া, অস্ট্রেলিয়া – সর্বত্রই স্থাপিত হতে থাকে তাদের শাখা। আমার চোখে দেখা, এই শাখাগুলো শুধু ভবন ছিল না, ছিল ভালোবাসার একেকটি কেন্দ্র। কুষ্ঠরোগী, এইডস আক্রান্ত, অনাথ শিশু, বৃদ্ধ – এমন হাজারো মানুষকে তারা সেবা দিত। যখন কোনো আন্তর্জাতিক দুর্যোগ দেখা দিত, তখন মিশনারিজ অফ চ্যারিটির কর্মীরা সবার আগে ছুটে যেত দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে। আমার মনে হয়, এই প্রতিষ্ঠানটি দেখিয়ে দিয়েছে যে, মানবসেবার কোনো ভৌগোলিক সীমা নেই, নেই কোনো ভাষার বাধা। ভালোবাসার শক্তিই পারে সব বাধা পেরিয়ে যেতে। বিশ্বের প্রায় ১৩০টিরও বেশি দেশে এই প্রতিষ্ঠানের ৬০০-এরও বেশি মিশন ছিল, যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সেবা পেয়েছেন। এই প্রতিষ্ঠানটি আজও মাদার তেরেসার আদর্শকে বহন করে চলেছে, যা আমাদের সবার জন্য এক বড় অনুপ্রেরণা।

নোবেল শান্তি পুরস্কার: বিশ্বের স্বীকৃতি

শান্তির দূত হিসেবে তাঁর অবদান

মাদার তেরেসা তাঁর নিঃস্বার্থ সেবার জন্য শুধু ভারতে নয়, বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করেন। তাঁর কাজ, তাঁর মানবসেবা এতটাই অসামান্য ছিল যে, ১৯৭৯ সালে তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। আমার তো মনে হয়, এটা ছিল বিশ্বের পক্ষ থেকে মানবতাকে দেওয়া এক বিশাল স্বীকৃতি। মাদার তেরেসা নিজেকে কখনোই কোনো পুরস্কারের যোগ্য মনে করেননি, তিনি বলতেন, এই পুরস্কার আসলে সেই সব অসহায় মানুষের জন্য, যাদের তিনি সেবা করেন। তিনি শান্তির প্রকৃত অর্থ দেখিয়েছিলেন – শুধুমাত্র যুদ্ধ না থাকা মানেই শান্তি নয়, বরং প্রতিটি মানুষের জীবনে যদি ভালোবাসা, মর্যাদা আর সম্মান থাকে, তবেই প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। তিনি দেখিয়েছিলেন, শান্তি শুরু হয় আমাদের বাড়িতে, আমাদের নিজের পরিবারে। যখন আমরা একে অপরের প্রতি সহনশীল হই, ভালোবাসা দেখাই, তখনই শান্তির বীজ বোনা হয়। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, যখন আমরা ছোট ছোট ক্ষেত্রে অপরের প্রতি সহানুভূতি দেখাই, তখন আমাদের নিজেদের মনও শান্ত হয়।

পুরস্কার গ্রহণের সময় তাঁর অমূল্য বার্তা

নোবেল শান্তি পুরস্কার গ্রহণ করার সময় মাদার তেরেসা যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তা আজও আমাকে নাড়া দেয়। তিনি সেই অনুষ্ঠানে একটি প্রথাগত ভোজসভা বাতিল করে সেই অর্থ অভাবী মানুষের জন্য দান করার অনুরোধ করেছিলেন। তাঁর এই সিদ্ধান্তই প্রমাণ করে যে, তিনি কতটা বাস্তববাদী ছিলেন এবং তাঁর মনোযোগ শুধুমাত্র সেবার দিকেই নিবদ্ধ ছিল। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, “আজ আমি সবচেয়ে দরিদ্রদের প্রতিনিধি হিসেবে এই পুরস্কার গ্রহণ করছি।” এই কথাগুলো আজও আমার কানে বাজে। তিনি বিশেষ করে গর্ভপাতকে বিশ্বের শান্তির জন্য সবচেয়ে বড় ধ্বংসকারী শক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন, কারণ এটি মায়ের কোল থেকে একটি শিশুকে ছিনিয়ে নেয়। আমার মনে হয়, তাঁর এই বার্তাগুলো শুধু তৎকালীন সময়ের জন্য নয়, আজও ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক। যখন আমরা দেখি সমাজে কীভাবে অসহায় মানুষদের অবহেলা করা হয়, তখন তাঁর এই কথাগুলো যেন আরও বেশি করে মনে পড়ে। তিনি আমাদের শিখিয়ে গেছেন, সবচেয়ে বড় দারিদ্র্য হলো ভালোবাসা না পাওয়া।

প্রতিটি জীবন মূল্যবান: মাদার তেরেসার দর্শন

ছোট ছোট ভালোবাসার গুরুত্ব

মাদার তেরেসা সবসময় বলতেন, “আমরা সবাই বড় কাজ করতে পারি না, কিন্তু আমরা ছোট ছোট কাজ করতে পারি বিশাল ভালোবাসা দিয়ে।” এই কথাটা আমার হৃদয়ে ভীষণভাবে গেঁথে গেছে। আমার মনে হয়, আমরা অনেকেই ভাবি যে, মানবসেবা মানেই বুঝি বিশাল কিছু করা। কিন্তু মাদার তেরেসা দেখিয়ে দিয়েছেন, একটা ছোট্ট হাসি, একটা সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেওয়া, বা কাউকে একমুঠো ভাত খাওয়ানো – এই ছোট ছোট কাজগুলোই যখন ভালোবাসা দিয়ে করা হয়, তখনই তা বড় সেবায় রূপান্তরিত হয়। আমি যখন আমার পরিচিত কাউকে সামান্য একটু সাহায্য করি, বা কোনো অসহায় প্রাণীকে একটু খাবার দিই, তখন যে আনন্দটা পাই, তা আসলে তাঁরই দেখানো পথের ফল। তিনি দেখিয়েছেন, প্রতিটি মানুষের জীবনেরই মূল্য আছে, প্রতিটি জীবনই পরম যত্নের দাবিদার। সমাজের তথাকথিত নিচুস্তরের মানুষগুলোকে তিনি যে মর্যাদা দিয়েছিলেন, তা আজও বিরল। তিনি আমাদের শিখিয়ে গেছেন, মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ নেই, ভালোবাসাই সবকিছুর উর্ধ্বে।

মৃত্যুপথযাত্রী ও অসহায়দের প্রতি তাঁর মমতা

মাদার তেরেসার সেবার একটা বড় অংশ ছিল মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের প্রতি যত্ন নেওয়া। কলকাতার ‘নির্মল হৃদয়’ নামের স্থানটি ছিল এমন সব মানুষের আশ্রয়স্থল, যাদের আর কোনো আশ্রয় ছিল না। পথে পড়ে থাকা অসুস্থ, মৃত্যুপথযাত্রী মানুষদের তিনি তুলে আনতেন, যত্ন করতেন, যাতে তারা সম্মানের সঙ্গে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারে। আমার মনে হয়, এই কাজটা করা সবচেয়ে কঠিন। কারণ, প্রায়শই এই মানুষগুলোর শরীর এতটাই খারাপ থাকত যে, তাদের ছোঁয়া বা কাছে যাওয়াও অনেকে এড়িয়ে চলত। কিন্তু মাদার তেরেসা আর তাঁর বোনেরা কোনো দ্বিধা ছাড়াই তাদের সেবা করতেন, তাদের কপালে হাত বুলিয়ে দিতেন, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাদের পাশে থাকতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, প্রত্যেক মানুষেরই শান্তিতে মারা যাওয়ার অধিকার আছে। এই মমতা আর সহানুভূতি দেখিয়ে তিনি যেন মানবতাকে নতুন এক উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিলেন। আমরা অনেকেই হয়তো এসব কাজ করার কথা ভাবতেও পারি না, কিন্তু মাদার তেরেসা সেটাই করে দেখিয়েছিলেন।

ক্ষেত্র বিবরণ
জন্ম ১৯১০ সালের ২৬শে আগস্ট (স্কোপিয়ে, উসমানীয় সাম্রাজ্য)
মৃত্যু ১৯৯৭ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর (কলকাতা, ভারত)
পূর্ণ নাম আঁগনেসে গোনজা বোয়াজিউ (Anjezë Gonxhe Bojaxhiu)
জাতীয়তা আলবেনীয়, ভারতীয়
প্রতিষ্ঠিত সংস্থা মিশনারিজ অফ চ্যারিটি (১৯৫০)
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার নোবেল শান্তি পুরস্কার (১৯৭৯), ভারতরত্ন (১৯৮০)
Advertisement

অনুপ্রেরণার অমলিন শিখা: তাঁর কাজ আজও প্রাসঙ্গিক

테레사 수녀 Mother Teresa    인도주의 활동 노벨 평화상 자선 단체 - Missionaries of Charity: A Global Embrace**
A vibrant, optimistic image depicting a diverse group of...

বর্তমান সময়ে তাঁর শিক্ষার প্রাসঙ্গিকতা

আজকের দিনে যখন আমরা নানা রকম জটিলতা, হিংসা আর বিভেদ দেখি, তখন মাদার তেরেসার জীবন আর তাঁর শিক্ষা যেন আরও বেশি করে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। আমরা হয়তো ভাবি, এমন বিশাল ব্যক্তিত্বের মতো কাজ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু তাঁর শিক্ষাটা ছিল ভীষণ সরল – ভালোবাসা আর সহানুভূতি দিয়ে পৃথিবীর ছবিটা বদলে দেওয়া। আমার মনে হয়, যখন আমরা নিজেদের আশেপাশে ছোট ছোট সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করি, বা আমাদের সহকর্মীদের প্রতি একটু বেশি সহানুভূতি দেখাই, তখনই তাঁর শিক্ষার প্রতিফলন ঘটে। সোশ্যাল মিডিয়াতে আমরা প্রতিনিয়ত নানা রকম নেতিবাচক খবর দেখি, যা আমাদের মনকে বিষিয়ে তোলে। কিন্তু এর মাঝেও যদি আমরা মাদার তেরেসার আদর্শ মনে রেখে অন্যের প্রতি সদয় হতে পারি, তাহলেই কিন্তু সমাজটা সুন্দর হবে। তিনি দেখিয়েছেন, অন্যের কষ্টকে নিজের কষ্ট মনে করতে পারাটাই হলো আসল মানবতা। এই সহজ কথাটা আজও আমাদের সবার জন্য এক বড় শিক্ষা।

আমরা কীভাবে তাঁর দেখানো পথে হাঁটতে পারি

আমরা হয়তো মাদার তেরেসার মতো সন্ন্যাসিনী হতে পারব না, বা বিশাল কোনো দাতব্য সংস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পারব না। কিন্তু আমরা প্রত্যেকেই নিজেদের জায়গা থেকে কিছু না কিছু করতে পারি। আমার মনে হয়, শুরুটা হওয়া উচিত নিজের পরিবার থেকে, নিজের প্রতিবেশী থেকে। আশেপাশে যদি কোনো বয়স্ক মানুষ থাকেন, তার খোঁজ নেওয়া, বা কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া – এই ছোট ছোট কাজগুলোই কিন্তু মাদার তেরেসার আদর্শের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা। আমি তো দেখেছি, যখন আমরা অন্যের জন্য কিছু করি, তখন আসলে নিজেদের জন্যই করি। সেই শান্তি আর আনন্দটা আসলে অমূল্য। আমরা যদি প্রতিদিন সামান্য কিছু সময়ের জন্য হলেও নিজেদের চারপাশে ভালোবাসার আলো ছড়িয়ে দিতে পারি, তাহলেই কিন্তু অনেক বড় পরিবর্তন আসবে। হতে পারে সেটা কোনো অনাথ আশ্রম বা বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে কিছুটা সময় কাটানো, বা কোনো অসহায় প্রাণীকে আশ্রয় দেওয়া। মাদার তেরেসা দেখিয়ে গেছেন, ভালোবাসার কোনো ভাষা নেই, তার প্রয়োজন শুধু একটি উষ্ণ হৃদয়।

একটি হাত বাড়ানো: নিজের অভিজ্ঞতা থেকে শেখা

Advertisement

আমার দেখা মাদার তেরেসার আদর্শের প্রতিফলন

আমি যখন প্রথম মাদার তেরেসার কর্মস্থলগুলোতে গিয়েছিলাম, তখন আমার ভেতরে এক অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছিল। কলকাতার ঘিঞ্জি পরিবেশে ‘নির্মল হৃদয়’ বা ‘শান্তি নগর’ এর মতো জায়গাগুলো যেখানে অসংখ্য মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল, সেখানে গিয়ে আমি দেখেছি কিভাবে সামান্য যত্নেও মানুষের মুখে হাসি ফোটে। যারা সমাজের চোখে একেবারেই ব্রাত্য, তাদের প্রতি এই যত্ন আর ভালোবাসা দেখে আমার চোখ ভিজে এসেছিল। আমার মনে আছে, একবার এক বৃদ্ধা আমাকে ধরে কেঁদেছিলেন, কারণ বছরের পর বছর ধরে কেউ তার খোঁজ নেয়নি। মিশনারিজ অফ চ্যারিটির সিস্টাররা তাকে যেভাবে সেবা দিচ্ছিলেন, তা দেখে মনে হয়েছিল যেন তিনি সত্যিই নিজের মায়ের কোলে ফিরে এসেছেন। এই অভিজ্ঞতাটা আমাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। আমি নিজের চোখে দেখেছি, মাদার তেরেসার আদর্শ শুধু বইয়ের পাতায় নয়, বাস্তবের মাটিতেও বেঁচে আছে, আর হাজারো মানুষ সেই পথ অনুসরণ করে চলেছে।

ছোট্ট কিছু করেও বড় পার্থক্য গড়ার গল্প

আমার জীবনে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, যা আমাকে মাদার তেরেসার শিক্ষার গুরুত্ব বুঝিয়েছে। একবার আমার অফিসের এক সহকর্মী খুব কঠিন সময় পার করছিলেন। আর্থিক এবং মানসিক – দুই দিক থেকেই তিনি ভেঙে পড়েছিলেন। আমি আর কয়েকজন বন্ধু মিলে ছোট একটা ফান্ড তৈরি করে তাকে সাহায্য করেছিলাম, আর সবচেয়ে বড় কথা, তার পাশে দাঁড়িয়েছিলাম মানসিকভাবে। যখন দেখলাম তার মুখে আবার হাসি ফুটেছে, তখন যে তৃপ্তিটা পেয়েছিলাম, তা কোনো কিছুর সঙ্গেই তুলনা চলে না। আমার মনে হয়, এটাই মাদার তেরেসার শিক্ষা। আমরা হয়তো বিশাল কোনো বিপর্যয় ঠেকাতে পারব না, কিন্তু আমাদের চারপাশের ছোট ছোট দুঃখগুলো দূর করার চেষ্টা তো করতেই পারি। একাকী মানুষের সঙ্গে কথা বলা, হতাশ মানুষকে ভরসা দেওয়া, বা কারো বিপদে পাশে দাঁড়ানো – এই ছোট ছোট কাজগুলোই কিন্তু সমাজে বড় পরিবর্তন নিয়ে আসে। আর এই পরিবর্তনগুলোই আমাদের জীবনকে আরও অর্থপূর্ণ করে তোলে।

ভালোবাসার শক্তি: একটি নিরবচ্ছিন্ন যাত্রা

সহানুভূতি ও সেবার এক দীর্ঘ পথ

মাদার তেরেসার জীবন ছিল সহানুভূতি আর সেবার এক দীর্ঘ যাত্রা। তিনি কখনোই হাল ছাড়েননি, কোনো বাধাই তাঁকে তাঁর পথ থেকে সরাতে পারেনি। যখন তিনি প্রথম কাজ শুরু করেন, তখন তাঁকে বহু বাধা আর সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। কিন্তু তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস আর ভালোবাসা তাঁকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। আমার মনে হয়, তাঁর এই নিরবচ্ছিন্ন যাত্রাই আমাদের শিখিয়ে দেয় যে, জীবনের যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতেও আমাদের মানবিকতা হারানো উচিত নয়। যখন আমরা দেখি, পৃথিবীতে কত যুদ্ধ, কত হানাহানি, তখন মাদার তেরেসার মতো মানুষেরা যেন এক আলোর রেখা দেখিয়ে যান। তাঁদের দেখানো পথেই পৃথিবীর সকল বিভেদ ভুলে মানুষ একত্রিত হতে পারে। তিনি দেখিয়েছেন, সত্যিকারের শক্তি অস্ত্রের মধ্যে নেই, বরং ভালোবাসার মধ্যেই সেই আসল শক্তি লুকিয়ে আছে, যা সব অন্ধকার দূর করতে পারে।

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তাঁর বার্তা

মাদার তেরেসা আমাদের জন্য শুধু একটি দাতব্য সংস্থা বা কিছু ভালো কাজ রেখে যাননি, বরং তিনি রেখে গেছেন এক জীবনদর্শন, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও এক অমূল্য বার্তা। তাঁর বার্তা ছিল খুবই সহজ: “ভালোবাসা দিয়ে সেবা করো।” তিনি আমাদের শিখিয়েছেন, প্রতিটি জীবনই মূল্যবান, এবং প্রতিটি মানুষই ভালোবাসা ও যত্নের দাবিদার। আমার মনে হয়, এই বার্তাটাই আমাদের শিশুদের শেখানো উচিত। ছোটবেলা থেকেই যদি আমরা তাদের মধ্যে সহানুভূতি আর অপরের প্রতি মমত্ববোধ জাগিয়ে তুলতে পারি, তাহলে তারাই হবে এক সুন্দর ভবিষ্যতের নির্মাতা। মাদার তেরেসা দেখিয়ে গেছেন, ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে, জাতি-বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠে কীভাবে মানুষের সেবা করা যায়। তাঁর এই শিক্ষাগুলো যদি আমরা নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করতে পারি, তাহলে আমাদের চারপাশটা আরও সুন্দর হবে, আরও শান্তিময় হবে। আমার তো মনে হয়, তাঁর মতো একজন ‘মা’ আমাদের সমাজে আজও ভীষণভাবে প্রয়োজন।বন্ধুরা, মাদার তেরেসার এই অসাধারণ জীবন আর তাঁর দেখানো ভালোবাসার পথ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আমার মনটা আজও ভরে যায় এক অন্যরকম শান্তিতে। আমরা সবাই হয়তো তাঁর মতো বিশাল কোনো কাজ করতে পারব না, কিন্তু তাঁর শিক্ষাটা যদি আমরা নিজেদের দৈনন্দিন জীবনে একটু হলেও কাজে লাগাতে পারি, তাহলেই এই পৃথিবীটা আরও সুন্দর হয়ে উঠবে। মনে রাখবেন, ভালোবাসার ছোট ছোট কাজই কিন্তু বড় পরিবর্তনের সূচনা করে। তাঁর মতো একজন মানুষ ছিলেন বলেই আজও আমরা মানবতায় বিশ্বাস রাখতে পারি।

글을 마치며

মাদার তেরেসার জীবন আমাদের দেখিয়ে যায় যে, মানুষের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা আর সেবা কতটা শক্তিশালী হতে পারে। তাঁর দেখানো পথ ধরে যদি আমরা নিজেদের চারপাশের ছোট ছোট দুঃখগুলোকেও দূর করার চেষ্টা করি, তবে সেটাই হবে তাঁর প্রতি আমাদের শ্রেষ্ঠ শ্রদ্ধাঞ্জলি। এই অস্থির পৃথিবীতে তাঁর আদর্শ আজও এক আলোর দিশারী, যা আমাদের মানবিকতা আর সহানুভূতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। চলুন, আমরা সবাই মিলে ভালোবাসার এক নতুন পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন দেখি।

Advertisement

알아두면 쓸모 있는 정보

১. মিশনারিজ অফ চ্যারিটি (Missionaries of Charity) আজও বিশ্বজুড়ে সক্রিয়ভাবে তাদের মানবসেবার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, যেখানে অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবক প্রতিনিয়ত অবদান রাখছেন।

২. আপনিও মাদার তেরেসার আদর্শ অনুসরণ করে আপনার আশেপাশে অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন, এমনকি ছোট একটি সাহায্যও তাদের জীবনে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।

৩. মাদার তেরেসার নাম ও ছবির সত্ত্ব এখন মিশনারিজ অফ চ্যারিটির অধীনে, তাই বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে এর ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাদের অনুমতি নিতে হয়।

৪. মাদার তেরেসা তাঁর নোবেল শান্তি পুরস্কারের অর্থ দরিদ্রদের জন্য বাড়ি তৈরিতে ব্যয় করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন এবং গর্ভপাতকে শান্তির সবচেয়ে বড় শত্রু বলে উল্লেখ করেছিলেন।

৫. তাঁর শিক্ষা আমাদের শেখায় যে, জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো পারস্পরিক সম্পর্ক, সহানুভূতি এবং অন্যের প্রতি মমতা, যা আজও আমাদের সমাজে ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক।

중요 사항 정리

মাদার তেরেসা তাঁর পুরো জীবন মানবসেবায় উৎসর্গ করেছেন, দেখিয়েছেন যে প্রতিটি মানুষেরই মর্যাদা ও ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার আছে। ১৯৫০ সালে কলকাতায় ‘মিশনারিজ অফ চ্যারিটি’ প্রতিষ্ঠা করে তিনি বিশ্বজুড়ে অসংখ্য অসহায় মানুষকে আশ্রয় ও সেবা দিয়েছেন। ১৯৭৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার পরও তিনি সেই সম্মানকে দরিদ্রদের প্রতি উৎসর্গ করেছেন। তাঁর মৌলিক বার্তা ছিল – ছোট কাজকেও বিশাল ভালোবাসা দিয়ে করা এবং ভালোবাসা ও সহানুভূতি দিয়েই পৃথিবীতে সত্যিকারের শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖

প্র: কে ছিলেন মাদার তেরেসা এবং তাঁর জীবনের মূল উদ্দেশ্য কী ছিল?

উ: আরে বন্ধুরা, মাদার তেরেসা নামটা শুনলেই কেমন যেন একটা শান্তি আর ভালোবাসার অনুভূতি আসে, তাই না? আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, যখন প্রথম তাঁর সম্পর্কে জানতে পারি, তখন মনে হয়েছিল পৃথিবীর বুকে সত্যিই একজন ফেরেশতা নেমে এসেছিলেন। তাঁর আসল নাম ছিল অ্যাগনেস গনজা বোয়াজিউ। জন্ম হয়েছিল সুদূর ম্যাসেডোনিয়ায়, কিন্তু তাঁর কর্মভূমি ছিল আমাদের প্রিয় কলকাতা। ১৯৫০ সালে তিনি ‘মিশনারিজ অফ চ্যারিটি’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর জীবনের মূল উদ্দেশ্য ছিল একটাই – অসহায়, দরিদ্র, অসুস্থ এবং পিছিয়ে পড়া মানুষদের সেবা করা। যারা সমাজ থেকে অবহেলিত, যাদের কেউ দেখতো না, মা তেরেসা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন পরম মমতায়। তিনি বিশ্বাস করতেন, ভালোবাসাই সবচেয়ে বড় শক্তি, আর এই ভালোবাসা দিয়ে যেকোনো মানুষের দুঃখ দূর করা সম্ভব। সত্যি বলতে, তাঁর এই ভাবনাটা আমাকে আজও ভীষণ অনুপ্রাণিত করে। নিজের চোখে দেখেছি, তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে হাজার হাজার মানুষের জীবনে নতুন আশা জাগিয়ে তুলেছে।

প্র: মাদার তেরেসার কাজ কীভাবে সমাজের উপর প্রভাব ফেলেছিল এবং তাঁর প্রধান অবদানগুলো কী কী?

উ: আমার মনে হয়, মাদার তেরেসার কাজের প্রভাব শুধু কলকাতা বা ভারতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, তা ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা বিশ্বে। তিনি দেখিয়েছিলেন, সামান্যতম সহানুভূতি আর নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দিয়েও সমাজের গভীরতম ক্ষত সারানো সম্ভব। তাঁর প্রধান অবদানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ‘মিশনারিজ অফ চ্যারিটি’র প্রতিষ্ঠা। এই সংস্থাটি বিশ্বের ১৩০টিরও বেশি দেশে সক্রিয় এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের সেবা করে চলেছে। তিনি কুষ্ঠরোগী, এইডস আক্রান্ত, অনাথ শিশু এবং মৃত্যুপথযাত্রীদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছিলেন। আমি যখন কলকাতার কালীঘাটে ‘নির্মল হৃদয়’ দেখেছি, তখন মনে হয়েছে যেন এক স্বর্গীয় স্থান, যেখানে মৃত্যুর মুখে থাকা মানুষগুলো শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত যত্ন আর ভালোবাসা পায়। তাঁর কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৯ সালে তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন, যা তাঁর মানবসেবার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়, তাঁর সবচেয়ে বড় অবদান ছিল মানুষের মনে আশার বীজ বুনে দেওয়া, তাদের আত্মমর্যাদা ফিরিয়ে আনা।

প্র: মাদার তেরেসার উত্তরাধিকার আজও কীভাবে আমাদের অনুপ্রাণিত করে?

উ: সত্যি বলতে কী, মাদার তেরেসার উত্তরাধিকার আজও আমাদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। তাঁর চলে যাওয়ার এত বছর পরেও তাঁর আদর্শ আর শিক্ষাই যেন আমাদের পথ দেখায়। তিনি শিখিয়েছিলেন, বড় কিছু করার জন্য বিশাল ক্ষমতা বা সম্পদ দরকার হয় না, দরকার হয় শুধু একটি উদার মন আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা। আমার নিজস্ব ব্লগিং জীবনেও আমি যখন মানুষের জন্য কিছু করার কথা ভাবি, তখন তাঁর এই সরল অথচ শক্তিশালী বার্তাটা আমার মনে পড়ে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত মিশনারিজ অফ চ্যারিটি আজও সক্রিয়ভাবে কাজ করে চলেছে, যা তাঁর মানবসেবার দর্শনকে বাঁচিয়ে রেখেছে। আমরা তাঁর জীবন থেকে শিখি কীভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও ধৈর্য ধরে কাজ করে যেতে হয়, কীভাবে সবার মাঝে ভালোবাসা আর সেবা ছড়িয়ে দিতে হয়। তিনি যেন আজও আমাদের কানে কানে বলেন, “বড় কাজ সবসময় বড় বড় জিনিস দিয়ে হয় না, বরং ছোট ছোট কাজ হয় বড় ভালোবাসা দিয়ে।” তাঁর এই দর্শনই আমাদের মতো সাধারণ মানুষদেরকেও অসাধারণ কিছু করার স্বপ্ন দেখায়।

📚 তথ্যসূত্র

Advertisement